তেহরানে হাওজা নিউজ এজেন্সি’র সঙ্গে আলাপচারিতায় হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাইসাম আলী পানাহ বলেন, ইসলামের মহীয়সী ব্যক্তিত্বদের জীবন পরিচয় তুলে ধরা সমাজে ধর্মীয় ও নৈতিক জীবনধারা প্রচারের অন্যতম কার্যকর উপায়। বক্তা, খতিব, গবেষক ও লেখকদের উচিত এই বিষয়ে আরও সচেতন ও সক্রিয় হওয়া।
তিনি বলেন, হযরত উম্মুল বানীন (সা.আ.) ইসলামের ইতিহাসে একজন অনন্য ও মর্যাদাশীল নারী। নানা গুণাবলীর সমন্বয়ে গঠিত এই মহান নারী আমীরুল মুমিনীন ইমাম আলী (আ.)–এর সহধর্মিণী এবং হযরত আবুল ফজল আল-আব্বাস (আ.)–এর জননী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন।
অতুলনীয় ধৈর্য, ঈমান ও আত্মত্যাগ
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাইসাম আলী পানাহ বলেন, হযরত উম্মুল বানীন (সা.আ.)–এর ধৈর্য ও স্থিতিশীলতা অসাধারণ ছিল। যখন ইমাম আলী (আ.) তাঁকে আবুল ফজল আব্বাস (আ.)–এর শাহাদাতের অগ্রীম সংবাদ দেন, তখন তিনি গভীর ঈমান ও ধৈর্যের সঙ্গে তা গ্রহণ করেন এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন যে তাঁর সন্তান রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (আ.)–এর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন।
তিনি বলেন, ধর্ম ও সত্যের পথে আত্মনিবেদন ছিল তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র। তিনি চারজন সন্তানকে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পথে উৎসর্গ করেছিলেন এবং এর জন্য তাঁর কোনো অভিযোগ, অনুশোচনা বা দ্বিধা ইতিহাসে দেখা যায় না।
হযরত আবুল ফজল (আ.)—শিষ্টাচার, আনুগত্য ও বীরত্বের প্রতীক
তিনি বলেন, হযরত উম্মুল বানীন (সা.আ.)–এর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ সন্তান হযরত আবুল ফজল আব্বাস (আ.)। তিনি ইমাম হুসাইন (আ.)–এর সুরক্ষায় নিজের সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করেছেন এবং শাহাদাত বরণ করেছেন। আরও তিন পুত্র আশুরার প্রান্তরে শাহাদাতবরণ করেন।
আধুনিক সমাজের জন্য আত্মত্যাগ ও দায়বদ্ধতার শিক্ষা
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাইসাম আলী পানাহ বলেন, আত্মত্যাগ ও দায়িত্ববোধ আজকের সমাজের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জীবনদর্শন। শহীদদের আত্মত্যাগ হলো হযরত উম্মুল বানীন (সা.আ.)–এর শিক্ষার ধারাবাহিকতা।
সন্তান-লালনে আদর্শ মা
তিনি বলেন, হযরত উম্মুল বানীন (সা.আ.)–এর সন্তানরা শুধু সাহসীই ছিলেন না, তারা শিষ্টাচার ও সৌজন্যেরও প্রতীক ছিলেন। এই গুণাবলি তাদের মায়ের কাছ থেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে এসেছে।
ইমামের প্রতি সম্মান ছিল উম্মুল বানীনের (সা.আ.) সন্তানদের চরিত্রের মূল নীতি। ফোরাতে পানি পান করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হযরত আবুল ফজল (আ.) ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাবুর শিশু ও নারীদের তৃষ্ণার্ত অবস্থার কথা মনে করে পানি পান করেননি—এটি মায়ের শেখানো শ্রদ্ধা ও আদবের প্রকাশ।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিবারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সন্তানদের শিষ্টাচার, মূল্যবোধ ও সম্মান শেখানো। হযরত উম্মুল বানীন (সা.আ.)–এর জীবন এ ক্ষেত্রে অসাধারণ শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত। পরিবারে যদি বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভদ্রতা প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে অনেক বিরোধ, ভুল বোঝাবুঝি ও অশান্তি দূর হবে।
আহলে বাইত (আ.)–এর প্রতি গভীর মারেফাত—সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য
তিনি বলেন, হযরত উম্মুল বানীন (সা.আ.)–এর নৈতিক গুণাবলি সীমাহীন, কিন্তু সর্বশ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্য হলো আহলে বাইত (আ.)–এর মর্যাদা ও গুরুত্ব সম্পর্কে তাঁর অসাধারণ জ্ঞান। তিনি তাঁদের ভালোবাসা, আনুগত্য ও সেবায় নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিবেদন করেছিলেন।
শেষে তিনি বলেন, হযরত উম্মুল বানীন (সা.আ.)–এর মতো মহীয়সী ব্যক্তিত্বদের জীবন সমাজে ইসলামী জীবনধারা ও নৈতিকতা প্রচারে এবং সামাজিক সমস্যার সমাধানে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
আপনার কমেন্ট